জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও দ্রুত উন্নয়নে তথ্য ও উপাত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রেখে চলেছে। তথ্য ও উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় গবেষণা এবং অব্যাহত গবেষণার ফল হচ্ছে জ্ঞান- বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নয়ন। তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপনে ব্যাপকতা লাভ করেছে সংখ্যার ব্যবহার। আর সংখ্যাসূচক তথ্য হচ্ছে পরিসংখ্যান। তাই পরিসংখ্যানের মৌলিক ধারণা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুসমূহ জানা আবশ্যক। পূর্ববর্তী শ্রেণিতে পরিসংখ্যানের মৌলিক বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ অধ্যায়ে কেন্দ্রীয় প্রবণতা, এর পরিমাপক গড়, মধ্যক ও প্রচুরক সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা
➤ কেন্দ্রীয় প্রবণতা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
➤ গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে গড়, মধ্যক ও প্রচুরক নির্ণয় করে সমস্যা সমাধান করতে পারবে।
➤ আয়তলেখ ও পাইচিত্র অঙ্কন করতে পারবে।
আগের শ্রেণিতে আমরা এ সম্বন্ধে মৌলিক ধারণা লাভ করেছি এবং বিস্তারিত জেনেছি। এখানে আমরা স্বল্প পরিসরে এ সম্বন্ধে আলোচনা করব। আমরা জানি, সংখ্যাভিত্তিক কোনো তথ্য বা ঘটনা হচ্ছে একটি পরিসংখ্যান। আর তথ্য বা ঘটনা-নির্দেশক সংখ্যাগুলো হচ্ছে পরিসংখ্যানের উপাত্ত। ধরা যাক, ৫০ নম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২০ জন প্রার্থীর গণিতের প্রাপ্ত নম্বর হলো ২৫, ৪৫, ৪০, ২০, ৩৫, ৩০, ৩৫, ৩০, ৪০, ৪১, ৪৬, ২০, ২৫, ৩০, ৪৫, ৪২, ৪৫, ৪৭, ৫০, ৩০ । এখানে, গণিতে প্রাপ্ত সংখ্যা-নির্দেশিত নম্বরসমূহ একটি পরিসংখ্যান। আর নম্বরগুলো হলো এ পরিসংখ্যানের উপাত্ত। এ উপাত্তগুলো সহজে সরাসরি উৎস থেকে সংগ্রহ করা যায়। সরাসরি উৎস থেকে সংগৃহীত উপাত্তের নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। সরাসরি উৎস থেকে সংগৃহীত হয় এমন উপাত্ত হলো প্রাথমিক উপাত্ত। মাধ্যমিক উপাত্ত পরোক্ষ উৎস থেকে সংগৃহীত হয় বিধায় এর নির্ভরযোগ্যতা অনেক কম। উপরে বর্ণিত উপাত্তের নম্বরগুলো এলোমেলোভাবে আছে। নম্বরগুলো মানের কোনো ক্রমে সাজানো নেই। এ ধরনের উপাত্ত হলো অবিন্যস্ত উপাত্ত। এ উপাত্তের নম্বরগুলো মানের যেকোনো ক্রমে সাজালে হবে বিন্যস্ত উপাত্ত। নম্বরগুলো মানের ঊর্ধ্বক্রমে সাজালে হয় ২০, ২০, ২৫, ২৫, ৩০, ৩০, ৩০, ৩০, ৩৫, ৩৫, ৪০, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৫, ৪৫, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৫০ যা একটি বিন্যস্ত উপাত্ত। অবিন্যস্ত উপাত্ত এভাবে বিন্যস্ত করা বেশ জটিল এবং ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ অতিসহজে বিন্যস্ত উপাত্তে রূপান্তর করা যায় এবং গণসংখ্যা সারণির সাহায্যে উপস্থাপন করা হয়।
উপাত্তের গণসংখ্যা সারণি তৈরি করার জন্য যে কয়েকটি ধাপ ব্যবহার করতে হয় তা হলো :
(১) পরিসর নির্ণয়, (২) শ্রেণিসংখ্যা নির্ণয়, (৩) শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ণয়, (৪) ট্যালি চিহ্নের সাহায্যে গণসংখ্যা নির্ণয়।
অনুসন্ধানাধীন উপাত্তের পরিসর = (সর্বোচ্চ সংখ্যা – সর্বনিম্ন সংখ্যা) + ১
শ্রেণিব্যাপ্তি : যেকোনো অনুসন্ধানলব্ধ উপাত্তের পরিসর নির্ধারণের পর প্রয়োজন হয় শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ধারণ। উপাত্তগুলোকে সুবিধাজনক ব্যবধান নিয়ে কতকগুলো শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। উপাত্তের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এগুলো সাধারণত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। শ্রেণিতে ভাগ করার নির্ধারিত কোনো নিয়ম নেই। তবে সচরাচর প্রত্যেক শ্রেণিব্যবধান সর্বনিম্ন ৫ ও সর্বোচ্চ ১৫-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। সুতরাং প্রত্যেক শ্রেণির একটি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান থাকে । যেকোনো শ্রেণির সর্বনিম্ন মানকে এর নিম্নসীমা এবং সর্বোচ্চ মানকে এর ঊর্ধ্বসীমা বলা হয়। আর যেকোনো শ্রেণির ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমার ব্যবধান হলো সেই শ্রেণির শ্রেণিব্যাপ্তি। উদাহরণস্বরূপ, মনে করি, ১০-২০ হলো একটি শ্রেণি, এর সর্বনিম্ন মান ১০ ও সর্বোচ্চ মান ২০ এবং (২০- ১০) = ১০ শ্রেণি ব্যাপ্তি হবে ১০+১=১১ । শ্রেণি ব্যাপ্তি সবসময় সমান রাখা শ্রেয়।
শ্রেণিসংখ্যা : শ্রেণিসংখ্যা হচ্ছে পরিসরকে যতগুলো শ্রেণিতে ভাগ করা হয় এর সংখ্যা।
ট্যালি চিহ্ন : উপাত্তের সংখ্যাসূচক তথ্যরাশির মান কোনো না কোনো শ্রেণিতে পড়ে। শ্রেণির বিপরীতে সাংখ্যিক মানের জন্য ট্যালি ' IN/' চিহ্ন দিতে হয়। কোনো শ্রেণিতে পাঁচটি ট্যালি চিহ্ন দিতে হলে চারটি দেওয়ার পর পঞ্চমটি আড়াআড়িভাবে দিতে হয়।
গণসংখ্যা : শ্রেণিসমূহের মধ্যে সংখ্যাসূচক তথ্যরাশির মানগুলো ট্যালি চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং এর মাধ্যমে গণসংখ্যা বা ঘটনসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। যে শ্রেণিতে যতগুলো ট্যালি চিহ্ন পড়বে তত হবে ঐ শ্রেণির গণসংখ্যা বা ঘটনসংখ্যা, যা ট্যালি চিহ্নের বিপরীতে গণসংখ্যা কলামে লেখা হয়।
উপরে বর্ণিত বিবেচনাধীন উপাত্তের পরিসর, শ্রেণিব্যাপ্তি ও শ্রেণিসংখ্যা নিচে দেওয়া হলো :
পরিসর = (উপাত্তের সর্বোচ্চ সাংখ্যিক মান – সর্বনিম্ন সাংখ্যিক মান) + ১
= (৫০-২০) + ১ = ৩১ ।
শ্রেণিব্যাপ্তি/শ্রেণি ব্যবধান ধরা যায় ৫ । তাহলে শ্রেণিসংখ্যা হবে = ৬.২ যা পূর্ণ সংখ্যায় রূপান্তর করলে হবে ৭ । অতএব শ্রেণিসংখ্যা ৭। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বর্ণিত উপাত্তের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি প্রস্তুত করা হলো :
শ্রেণি ব্যাপ্তি | ট্যালি চিহ্ন | ঘটনসংখ্যা বা গণসংখ্যা |
---|---|---|
২০-২৪ | ।। | ২ |
২৫-২৯ | ।। | ২ |
৩০-৩৪ | ।।।। | ৪ |
৩৫-৩৯ | ।। | ২ |
৪০-৪৪ | ।।।। | ৪ |
৪৫-৪৯ | ৫ | |
৫০-৫৪ | । | ১ |
মোট | ২০ | ২০ |
কাজ : তোমরা নিজেদের মধ্য থেকে ২০ জনের দল গঠন কর এবং দলের সদস্যদের উচ্চতার গণসংখ্যা সারণি তৈরি কর। |
তথ্য ও উপাত্ত লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন একটি বহুলপ্রচলিত পদ্ধতি। কোনো পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত উপাত্ত লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত হলে তা বোঝা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য খুব সুবিধাজনক হয়। অধিকন্তু চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত উপাত্ত চিত্তাকর্ষকও হয়। তাই বুঝা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে উপাত্তসমূহের গণসংখ্যা নিবেশনের চিত্র লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। গণসংখ্যা নিবেশন উপস্থাপনে বিভিন্ন রকম লেখচিত্রের ব্যবহার থাকলেও এখানে কেবলমাত্র আয়তলেখ ও পাইচিত্র নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আয়তলেখ (Histogram) : গণসংখ্যা নিবেশনের একটি লেখচিত্র হচ্ছে আয়তলেখ । আয়তলেখ অঙ্কনের জন্য ছক কাগজে x ও y-অক্ষ আঁকা হয়। x-অক্ষ বরাবর শ্রেণিব্যাপ্তি এবং y-অক্ষ বরাবর গণসংখ্যা নিয়ে আয়তলেখ আঁকা হয় । আয়তের ভূমি হয় শ্রেণিব্যাপ্তি এবং উচ্চতা হয় গণসংখ্যা।
উদাহরণ ১। নিচে ৫০ জন শিক্ষার্থীর উচ্চতার গণসংখ্যা নিবেশন দেওয়া হলো। একটি আয়তলেখ আঁক।
উচ্চতার শ্রেণিব্যাপ্তি (সেমিতে) | ১১৪-১২৪ | ১২৪-১৩৪ | ১৩৪-১৪৪ | ১৪৪-১৫৪ | ১৫৪-১৬৪ | ১৬৪-১৭৪ |
গণসংখ্যা (শিক্ষার্থীর সংখ্যা | ৩ | ৫ | ১০ | ২০ | ৮ | ৪ |
ছক কাগজের ১ ঘর সমান শ্রেণিব্যাপ্তির ২ একক ধরে x-অক্ষে শ্রেণিব্যাপ্তি এবং ছক কাগজের ১ ঘর সমান গণসংখ্যার ১ একক ধরে y-অক্ষে গণসংখ্যা নিবেশন স্থাপন করে গণসংখ্যা নিবেশনের আয়তলেখ আঁকা হলো। x-অক্ষের মূলবিন্দু থেকে ১১৪ ঘর পর্যন্ত ভাঙা চিহ্ন দিয়ে আগের ঘরগুলো বিদ্যমান বোঝানো হয়েছে।
কাজ : (ক) ৩০ জন নিয়ে দল গঠন কর। দলের সদস্যদের গণিতে প্রাপ্ত নম্বরের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি কর। (খ) গণসংখ্যা নিবেশনের আয়তলেখ আঁক। |
পাইচিত্র (Pie Chart): পাইচিত্রও একটি লেখচিত্র। অনেক সময় সংগৃহীত পরিসংখ্যান কয়েকটি উপাদানের সমষ্টি দ্বারা গঠিত হয় অথবা একে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এ সকল ভাগকে একটি বৃত্তের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অংশে প্রকাশ করলে যে লেখচিত্র পাওয়া যায় তাই পাইচিত্র। পাইচিত্রকে বৃত্তলেখও বলা হয়। আমরা জানি, বৃত্তের কেন্দ্রে সৃষ্ট কোণের পরিমাণ ৩৬০°। কোনো পরিসংখ্যান ৩৬০° এর অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হলে তা হবে পাইচিত্র।
আমরা জানি, ক্রিকেটখেলায় ১, ২, ৩, ৪, ও ৬ করে রান সংগৃহীত হয়। তাছাড়া নো-বল ও ওয়াইড বলের জন্য অতিরিক্ত রান সংগৃহীত হয়। কোনো-এক খেলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সংগৃহীত রান নিচের সারণিতে দেওয়া হলো :
রান সংগ্রহ | ১ করে | ২ করে | ৩ করে | ৪ করে | ৬ করে | অতিরিক্ত রান | মোট |
বিভিন্ন প্রকারের সংগৃহীত রান | ৬৬ | ৫০ | ৩৬ | ৪৮ | ৩০ | ১০ | ২৪০ |
ক্রিকেটখেলার উপাত্ত পাইচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলে, বোঝার জন্য যেমন সহজ হয় তেমনি চিত্তাকর্ষকও হয়। আমরা জানি, বৃত্তের কেন্দ্রে সৃষ্ট কোণ ৩৬০°। উপরে বর্ণিত উপাত্ত ৩৬০°-এর অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হলে, উপাত্তের পাইচিত্র পাওয়া যাবে।
২৪০ রানের জন্য কোণ = ৩৬০°
∴ ১ '' '' ''
∴ ৬৬ '' '' ''
৫০ রানের জন্য কোণ = ৩৬০° = ৭৫°
৩৬ রানের জন্য কোণ = ৩৬০° = ৫৪°
৪৮ রানের জন্য কোণ = ৩৬০° = ৭২°
৩০ রানের জন্য কোণ = ৩৬০° = ৪৫°
১০ রানের জন্য কোণ = ৩৬০° = ১৫°
এখন, প্রাপ্ত কোণগুলো ৩৬০°-এর অংশ হিসাবে আঁকা হলো। যা বর্ণিত উপাত্তের পাইচিত্র।
উদাহরণ ২। কোনো এক বছরে দুর্ঘটনাজনিত কারণে সংঘটিত মৃত্যুর সারণি নিচে দেয়া হলো। একটি পাইচিত্র আঁক।
দুর্ঘটনা | বাস | ট্রাক | কার | নৌযান | মোট |
মৃতের সংখ্যা | ৪৫০ | ৩৫০ | ২৫০ | ১৫০ | ১২০০ |
উদাহরণ ৩। দুর্ঘটনায় মৃত ৪৫০ জনের মধ্যে কতজন নারী, পুরুষ ও শিশু তা পাইচিত্রে দেখানো হয়েছে। নারীর জন্য নির্দেশিত কোণ ৮০°। নারীর সংখ্যা কত?
কাজ : ১। তোমাদের শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ৬ জন করে নিয়ে দল গঠন কর। দলের সদস্যরা নিজেদের উচ্চতা মাপ এবং প্রাপ্ত উপাত্ত পাইচিত্রের মাধ্যমে দেখাও। ২। তোমরা তোমাদের পরিবারের সকলের বয়সের উপাত্ত নিয়ে পাইচিত্র আঁক। প্রত্যেকের বয়সের নির্ধারিত কোণের জন্য কার বয়স কত তা নির্ণয়ের জন্য পাশের শিক্ষার্থীর সাথে খাতা বদল কর। |
ধরা যাক, কোনো একটি সমস্যা সমাধানে ২৫ জন ছাত্রীর যে সময় (সেকেন্ডে) লাগে তা হলো
২২, ১৬, ২০, ৩০, ২৫, ৩৬, ৩৫, ৩৭, ৪০, ৪৩, ৪০, ৪৩, ৪৪, ৪৩, ৪৪, ৪৬, ৪৫, ৪৮, ৫০, ৬৪, ৫০, ৬০, ৫৫, ৬২, ৬০।
সংখ্যাগুলো মানের ঊর্ধ্বক্রমে সাজালে হয় :
১৬, ২০, ২২, ২৫, ৩০, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৪০, ৪০, ৪৩, ৪৩, ৪৩, ৪৪, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫০, ৫৫, ৬০, ৬০, ৬২, ৬৪। বর্ণিত উপাত্তসমূহ মাঝামাঝি মান ৪৩ বা ৪৪ এ পুঞ্জিভূত। গণসংখ্যা সারণিতে এই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। বর্ণিত উপাত্তের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করলে হয়
ব্যাপ্তি | ১৬-২৫ | ২৬-৩৫ | ৩৬-৪৫ | ৪৬-৫৫ | ৫৬-৬৫ |
গণসংখ্যা | ৪ | ২ | ১০ | ৫ | ৪ |
এই গণসংখ্যা নিবেশন সারণিতে দেখা যাচ্ছে ৩৬-৪৫ শ্রেণিতে গণসংখ্যা সর্বাধিক। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, উপাত্তসমূহ মাঝামাঝি বা কেন্দ্রের মানের দিকে পুঞ্জিভূত হয়। মাঝামাঝি বা কেন্দ্ৰে মানের দিকে উপাত্তসমূহের পুঞ্জিভূত হওয়ার প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে। কেন্দ্রীয় মান উপাত্তসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংখ্যা যার দ্বারা কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপ করা হয়। সাধারণভাবে, কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ হলো (১) গাণিতিক গড় বা গড় (২) মধ্যক (৩) প্রচুরক।
আমরা জানি, উপাত্তসমূহের সংখ্যাসূচক মানের সমষ্টিকে যদি উপাত্তসমূহের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়, তবে গাণিতিক গড় পাওয়া যায়। মনে করি, উপাত্তসমূহের সংখ্যা n এবং এদের সংখ্যাসূচক মান ।
যদি উপাত্তসমূহের গাণিতিক গড় মান হয়, তবে । এখানে,
[(সিগমা)একটি গ্রিক অক্ষর। যা দ্বারা উপাত্তের সংখ্যাসূচক মানসমূহের যোগফল বোঝানো হয়েছে]
উদাহরণ ৪। ৫০ নম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় কোনো শ্রেণির ২০ জন শিক্ষার্থীর গণিতের প্রাপ্ত নম্বর ৪০, ৪১, ৪৫, ১৮, ৪১, ২০, ৪৫, ৪১, ৪৫, ২৫, ২০, ৪০, ১৮, ২০, ৪৫, ৪৭, ৪৮, ৪৮, ৪৯, ১৯। প্রাপ্ত নম্বরের গাণিতিক গড় নির্ণয় কর।
সমাধান : এখানে ইত্যাদি
∴ গাণিতিক গড় ৩৫.৭৫
উপাত্তের সংখ্যা যদি বেশি হয় তবে আগের পদ্ধতিতে গড় নির্ণয় করা বেশ জটিল হয় এবং বেশি সংখ্যক উপাত্তের সংখ্যাসূচক মানের সমষ্টি নির্ণয় করতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা বেশ সুবিধাজনক।
সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় প্রবণতা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এদের সম্ভাব্য গড় অনুমান করা হয়। উপরের উদাহরণে প্রদত্ত উপাত্তের কেন্দ্রীয় প্রবণতা ভালোভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায় যে, গাণিতিক গড় ৩০ থেকে ৪৬ এর মধ্যে একটি সংখ্যা। মনে করি, গাণিতিক গড় ৩০। এখন প্রত্যেক সংখ্যা থেকে অনুমিত গড় ৩০ বিয়োগ করে বিয়োগফল নির্ণয় করতে হবে। সংখ্যাটি ৩০ থেকে বড় হলে বিয়োগফল ধনাত্মক এবং ছোট হলে বিয়োগফল ঋণাত্মক হবে। এরপরে সকল বিয়োগফলের বীজগাণিতিক সমষ্টি নির্ণয় করতে হয়। পরপর দুইটি বিয়োগফল যোগ করে ক্রমযোজিত সমষ্টি নির্ণয়ের মাধ্যমে সকল বিয়োগফলের সমষ্টি অতি সহজে নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ, বিয়োগফলের গণসংখ্যা ক্রমযোজিত গণসংখ্যার সমান হবে। উপরের উদাহরণে ব্যবহৃত উপাত্তের গাণিতিক গড় কীভাবে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করা হয় তা নিচের সারণিতে উপস্থাপন করা হলো। মনে করি, উপাত্তসমূহ xi (i = 1, 2, ..., n) এর অনুমিত গড় a ( = ৩০)।
সূত্র ১। গাণিতিক গড় (বিন্যস্ত উপাত্ত) : যদি n সংখ্যক উপাত্তের k সংখ্যক মান
এর গণসংখ্যা যথাক্রমে হয়, তবে উপাত্তের গাণিতিক গড় যেখানে n হলো মোট গণসংখ্যা।
উদাহরণ ৫। নিচে কোনো একটি শ্রেণির ১০০জন শিক্ষার্থীর গণিতে প্রাপ্ত নম্বরের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি দেওয়া হলো । প্রাপ্ত নম্বরের গাণিতিক গড় নির্ণয় কর।
শ্রেণিব্যাপ্তি | ২৫-৩৪ | ৩৫-৪৪ | ৪৮-৫৪ | ৫৫-৬৪ | ৬৫-৭৪ | ৭৫-৮৪ | ৮৫-৯৪ |
গণসংখ্যা | ৫ | ১০ | ১৫ | ২০ | ৩০ | ১৬ | ৪ |
সমাধান : এখানে শ্রেণিব্যাপ্তি দেওয়া আছে বিধায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নম্বর কত তা জানা যায় না। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রেণির শ্রেণি মধ্যমান নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়।
যদি শ্রেণি মধ্যমান হয় তবে মধ্যমান সংবলিত সারণি হবে নিম্নরূপ :
শ্রেণি ব্যাপ্তি | শ্রেণি মধ্যমান () | গণসংখ্যা () | ( ) |
২৫ – ৩৪ | ২৯.৫ | ৫ | ১৪৭.৫ |
৩৫ – 88 | ৩৯.৫ | ১০ | ৩৯৫.০ |
৪৫-৫৪ | ৪৯.৫ | ১৫ | ৭৪২.৫ |
৫৫-৬৪ | ৫৯.৫ | ২০ | ১১৯০.০ |
৬৪-৭৪ | ৬৯.৫ | ৩০ | ২০৮৫.০ |
৭৫-৮৪ | ৭৯.৫ | ১৬ | ১২৭২.০ |
৮৫-৯৪ | ৮৯.৫ | ৪ | ৩৫৮.০ |
মোট | ১০০ | ৬১৯০.০০ |
আমরা ৭ম শ্রেণিতে পরিসংখ্যানে অনুসন্ধানাধীন উপাত্তসমূহের মধ্যক সম্বন্ধে জেনেছি।
ধরা যাক, ৫, ৩, ৪, ৮, ৬, ৭, ৯, ১১, ১০ কতকগুলো সংখ্যা । এ সংখ্যাগুলোকে মানের ক্রমানুসারে সাজালে হয়, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১। ক্রমবিন্যস্ত সংখ্যাগুলোকে সমান দুই ভাগ করলে হয়
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, ৭ সংখ্যাগুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে এবং এর অবস্থান মাঝে । সুতরাং এখানে মধ্যপদ হলো ৫ম পদ। এই ৫ম পদ বা মধ্যপদের মান ৭। অতএব, সংখ্যাগুলোর মধ্যক হলো ৭ । এখানে প্রদত্ত উপাত্তগুলো বা সংখ্যাগুলো বিজোড় সংখ্যক। আর যদি সংখ্যাগুলো জোড় সংখ্যক হয়, যেমন ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২১, ২২ এর মধ্যক কী হবে ? সংখ্যাগুলোকে সমান দুই ভাগ করলে হবে
দেখা যাচ্ছে যে, ১৩ ও ১৫ সংখ্যাগুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে এবং এদের অবস্থান মাঝামাঝি। এখানে মধ্যপদ ৬ষ্ঠ ও ৭ম পদ। সুতরাং মধ্যক হবে ৬ষ্ঠ ও ৭ম পদের সংখ্যা দুইটির গড় মান। ৬ষ্ঠ ও ৭ম পদের সংখ্যার গড় মান বা ১৪। অর্থাৎ, এখানে মধ্যক ১৪।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, যদি n সংখ্যক উপাত্ত থাকে এবং n যদি বিজোড় সংখ্যা তবে উপাত্তগুলোর মধ্যক হবে তম পদের মান। আর n যদি জোড় সংখ্যা হয় তবে মধ্যক হবে তম ও তম পদ দুইটির সাংখ্যিক মানের গড়।
উপাত্তগুলোকে মানের ক্রমানুসারে সাজালে যে মান উপাত্তগুলোকে সমান দুইভাগে ভাগ করে সেই মানই হবে উপাত্তগুলোর মধ্যক। |
উদাহরণ ৬। নিচের সংখ্যাগুলোর মধ্যক নির্ণয় কর : ২৩, ১১, ২৫, ১৫, ২১, ১২, ১৭, ১৮, ২২, ২৭, ২৯, ৩০, ১৬, ১৯।
সমাধান : সংখ্যাগুলোকে মানের ক্রমানুসারে ঊর্ধ্বক্রমে সাজানো হলো-
১১, ১২, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯, ৩০
এখানে n = ১৪, যা জোড় সংখ্যা।
অতএব, মধ্যক ২০।
কাজ : ১ । তোমাদের শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের থেকে ১৯ জন, ২০ জন ও ২১ জন নিয়ে ৩টি দল গঠন কর। প্রত্যেক দল তার সদস্যদের রোল নম্বরগুলো নিয়ে দলের মধ্যক নির্ণয় কর। |
উদাহরণ ৭ । নিচে ৫০ জন ছাত্রীর গণিতে প্রাপ্ত নম্বরের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি দেওয়া হলো। মধ্যক নির্ণয় কর।
প্রাপ্ত নম্বর | ৪৫ | ৫০ | ৬০ | ৬৫ | ৭০ | ৭৫ | ৮০ | ৯০ | ৯৫ | ১০০ |
গণসখ্যা | ৩ | ২ | ৫ | ৪ | ১০ | ১৫ | ৫ | ৩ | ২ | ১ |
সমাধান : মধ্যক নির্ণয়ের গণসংখ্যা সারণি
প্রাপ্ত নম্বর | গণসখ্যা | যোজিত গণসখ্যা |
৪৫ | ৩ | ৩ |
৫০ | ২ | ৫ |
৬০ | ৫ | ১০ |
৬৫ | ৪ | ১৪ |
৭০ | ১০ | ২৪ |
৭৫ | ১৫ | ৩৯ |
৮০ | ৫ | ৪৪ |
৯০ | ৩ | ৪৭ |
৯৫ | ২ | ৪৯ |
১০০ | ১ | ৫০ |
এখানে, n = ৫০, যা জোড় সংখ্যা
∴ ছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যক ৭৫।
লক্ষ করি : এখানে ২৫তম থেকে ৩৯ তম প্রত্যেকটি পদের মান ৭৫।
কাজ : তোমাদের শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে ২টি দল গঠন কর। একটি সমস্যা সমাধানে প্রত্যেকের কত সময় লাগে (ক) তার গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি কর, (খ) সারণি হতে মধ্যক নির্ণয় কর। |
মনে করি, ১১, ৯, ১০, ১২, ১১, ১২, ১৪, ১১, ১০, ২০, ২১, ১১, ৯ ও ১৮ একটি উপাত্ত। উপাত্তটি মানের ঊর্ধ্বক্রমে সাজালে হয়—
৯, ৯, ১০, ১০, ১১, ১১, ১১, ১১, ১২, ১২, ১৪, ১৮, ২০, ২১।
বিন্যাসকৃত উপাত্তটি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, ১১ সংখ্যাটি ৪ বার উপস্থাপিত হয়েছে যা উপস্থাপনায় সর্বাধিক বার। যেহেতু উপাত্তে ১১ সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি বার আছে তাই এখানে ১১ হলো উপাত্তগুলোর প্রচুরক :
কোনো উপাত্তে যে সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি বার থাকে তাকে প্রচুরক বলে। |
উদাহরণ ৮। নিচে ৩০ জন ছাত্রীর বার্ষিক পরীক্ষায় সমাজবিজ্ঞানে প্রাপ্ত নম্বর দেওয়া হলো। উপাত্তগুলোর প্রচুরক নির্ণয় কর।
৭৫, ৩৫, ৪০, ৮০, ৬৫, ৮০, ৮০, ৯০, ৯৫, ৮০, ৬৫, ৬০, ৭৫, ৮০, ৪০, ৬৭, ৭০, ৭২, ৬৯, ৭৮, ৮০, ৮০, ৬৫, ৭৫,৭৫, ৮৮, ৯৩, ৮০, ৭৫, ৬৫।
সমাধান : উপাত্তগুলোকে মানের ঊর্ধ্বক্রমে সাজানো হলো : ৩৫, ৪০, ৪০, ৬০, ৬৫, ৬৫, ৬৫, ৬৫, ৬৭, ৬৯, ৭০, ৭২, ৭৫, ৭৫, ৭৫, ৭৫, ৭৫, ৭৮, ৮০, ৮০, ৮০, ৮০, ৮০, ৮০, ৮০, ৮০, ৮৮, ৯০, ৯৩, ৯৫।
উপাত্তগুলোর উপস্থাপনায় ৪০ আছে ২ বার, ৬৫ আছে ৪ বার, ৭৫ আছে ৫ বার, ৮০ আছে ৮ বার এবং বাকি নম্বরগুলো ১ বার করে আছে। এখানে ৮০ আছে সর্বাধিক ৮ বার। সুতরাং উপাত্তগুলোর প্রচুরক ৮০। নির্ণেয় প্রচুরক ৮০।
উদাহরণ ৯। নিচের উপাত্তসমূহের প্রচুরক নির্ণয় কর :
৪, ৬, ৯, ২০, ১০, ৮, ১৮, ১৯, ২১, ২৪, ২৩, ৩০।
সমাধান : উপাত্তসমূহকে মানের ঊর্ধ্বক্রমে সাজানো হলো :
৪, ৬, ৮, ৯, ১০, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২৩, ২৪, ৩০।
এখানে লক্ষণীয় যে, কোনো সংখ্যাই একাধিকবার ব্যবহৃত হয়নি । তাই উপাত্তগুলোর প্রচুরক নেই।